আমাদের সবার জীবনেই কিছু না কিছু চাপ আছেই। ছাত্রছাত্রীদের পড়ালেখার চাপ, চাকুরীজীবীদের কাজের চাপ; আরও কত শত চাপ! যদি এমন হত আমাদের কারও কোন চাপ নেই, কেমন হত ? ভালই হত। কিন্তু পুরোপুরি চাপমুক্ত থাকা কারও পক্ষেই সম্ভব না। তবে একটু চেষ্টা করলে আমরা কিন্তু অনেকটাই চাপমুক্ত থাকতে পারি।
সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সাধারণত কোন পরিস্থিতিতে আপনি চাপ অনুভব করেন তা নির্ণয় করা। যেসব বিষয় আপনাকে চাপে ফেলে সেগুলোর একটা তালিকা তৈরি করুন, সেগুলো থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায় তার উপায় বের করার চেষ্টা করুন। চাপমুক্তির প্রক্রিয়া একেকজনের জন্য একেক রকম। তবে কিছু সার্বজনীন পন্থা রয়েছে যেগুলো অবলম্বন করলে দৈনন্দিন জীবনের চাপ থেকে অনেকাংশেই মুক্তি পাওয়া যায়। এখানে সেরকম কিছু পদ্ধতির উল্লেখ করা হল যা মোটামুটি সবার কাজে লাগবে।১. অপ্রয়োজনীয় আশ্বাস দেওয়া থেকে বিরত থাকুনঃ কাউকে কথা দেওয়ার আগে ভালমত চিন্তা ভাবনা করুন। হুটহাট আবেগের বশে
কোন অঙ্গীকার করবেন না। আগে ভাবুন অঙ্গীকার পূরণ করতে পারবেন কিনা। যে অঙ্গীকার পূরণ করা আপনার পক্ষে সম্ভব না অথবা কষ্টসাধ্য সে অঙ্গীকার করলে, পরে পূরণ না করতে পারলে আপনার মনের উপর প্রচণ্ড চাপ পড়তে পারে। কথা রাখতে না পারার লজ্জা আপনাকে কুরে কুরে খাবে।
২. ধীরস্থির এবং শান্ত থাকুনঃ সব ধরনের কাজেই তাড়াহুড়ো পরিহার করা উচিত। তাড়াহুড়োর কাজ অধিকাংশ সময়েই ভাল হয় না। নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হোন, ভেবে দেখুন আপনার কাজের ফলাফল কার এবং কিসের উপর প্রভাব ফেলছে। আপনার ব্যর্থতার প্রভাব কতটা খারাপ হতে পারে। কাজের প্রতি যত্নবান হোন, সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সময় নিয়ে ভাবুন। গুছিয়ে কাজ করুন। আর, খুশি বা প্রচণ্ড উত্তেজনার বশে হঠাৎ কোন সিদ্ধান্ত ভুলেও নিবেন না।
৩. সময় সচেতন হোনঃ সময় অতি মূল্যবান। সময়ের অপচয় করবেন না। সময়ানুবর্তী হওয়ার অনুশীলন করুন। গবেষণায় দেখা গেছে কোন কাজে দেরিতে পৌঁছানো মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। সময় খরচ করার ক্ষেত্রে সাবধান থাকুন। নিয়মিত রুটিন করে কাজ করলে কাজের ফলাফল ভাল হয়।
৪. নিয়ন্ত্রন রাখুনঃ নিজের উপর নিয়ন্ত্রন রাখুন। পরিবেশের উপর নিয়ন্ত্রন রাখার চেষ্টা করুন। পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে চলার অভ্যাস করুন। তবে, অন্যদের নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করবেন না। এর নেতিবাচক ফল আপনাকে আরও চাপে ফেলবে।
৫. অনেক কিছু একসাথেঃ একসাথে অনেক কাজ করাটা দৃশ্যত কার্যকরী মনে হলেও এটা আপনাকে নির্দিষ্ট একটা বিষয়ে ফোকাস করতে দেয় না। এর ফলে আপনি আসলে কোন কাজেই সম্পূর্ণ মনোযোগ বা সামর্থ্য দিতে পারেন না। এর ফলে কোন কাজই ভালোভাবে শেষ হয়না, এবং আপনার মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়।
৬. অন্যকে সহায়তা করুনঃ মানুষকে সহায়তার মধ্যে অন্যরকম একটা আনন্দ আছে। নিঃস্বার্থ ভাবে অন্যকে সাহায্য করুন, দেখবেন আপনার নিজের কাছেই অনেক ভাল লাগবে। এতে করে আপনার চাপ কিছুটা হলেও কমবে।
৭. কাজের মাঝে বিশ্রাম নিনঃ একটানা কাজ মানুষের মনে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তাই কাজ করার মাঝে কিছুক্ষনের জন্য বিশ্রাম নিন। হালকা ব্যয়াম করুন, চা-কফি খান, বন্ধুদের সাথে কথা বলুন, আত্মীয়স্বজনের
খোঁজখবর নিন; দেখবেন আপনার মন অনেকটাই হালকা হয়ে যাবে। আর একটা কথা, আপনি যদি এমন কোন কাজ করেন যার পরিবেশ সবসময় আপনার অনুপযোগী, তাহলে আপনার সেই কাজ ছেড়ে দেওয়াই ভাল। অতিরিক্ত মানসিক চাপ নিয়ে কাজ করলে হিতে বিপরীত হওয়ার আশংকা থাকে।
৮. ব্যায়াম করুনঃ নিয়মিত শরীরচর্চা আপনার চাপ কমাতে সাহায্য করে। দৈনিক কিছুটা সময় শরীরচর্চার জন্য বরাদ্দ রাখুন।
৯. স্বাস্থ্যকর খাবার খানঃ অনেক সময় অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের ফলে শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। এজন্য খাবারের ব্যপারে সচতন থাকুন। সঠিক পুষ্টি সম্পন্ন খাদ্য আপনার অশান্তি দূর করতে সহায়তা করবে।
১০. নিয়ম করে ঘুমানঃ ঘুম আমাদের শরীর ও মনের স্বাস্থ্যের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। নিয়মিত ঘুম না হলে আমাদের শরীর ও মনের উপর প্রভাব ফেলে। মানসিক বিষাদ তৈরি হয়। ভাল একটা ঘুম আপনাকে বিশাল চাপ থেকে মুক্তি দিতে পারে।
১১. আপনার বিরক্তি বা অস্বস্তি শেয়ার করুনঃ আপনি কোন বিষয়ে বা কারও উপর বিরক্ত থাকতে পারেন, অথবা এমন হতে পারে যে কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করতে আপনি ইতস্তত বোধ করেন। আপনি আপনার আশেপাশের মানুষদের সাথে এগুলো শেয়ার করুন। তবে তাদেরকে সুন্দর করে বুঝিয়ে বলুন, আপনার সমস্যা তাদের বুঝতে দিন। তাদের সাথে খারাপ আচরণ করবেন না। যদি তারা আপনার অবস্থা বুঝেও আপনাকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে, তাদেরকে পরিহার করুন। তারা আপনার শত্রু !
১২. সবকিছু ব্যক্তিগত ভাববেন নাঃ মানুষজন আপনার সামনে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কৌতুক বা হাসাহাসি করতেই পারে, সেগুলো ব্যক্তিগত ভাবে নিবেন না। তারা যে আপনাকেই অপমান বা বিব্রত করার চেষ্টা করছে সেরকম নাও হতে পারে। আর যদি হয়ই, সমস্যা কি ? তারা আপনাকে আপনার ভুল ধরিয়ে দিচ্ছে। চাপ নেওয়ার কিছু নেই। ভুলগুলো শোধরানোর চেষ্টা করুন।
১৩. সুযোগের অপেক্ষায় থাকবেন নাঃ শেষ সুযোগের আশায় বসে থাকবেন না। এটাই শেষ সুযোগ মনে করে কাজ করুন।
১৪. অল্পে তুষ্ট থাকুনঃ চাহিদা কমান। যাদের চাহিদা বেশি তাদের অশান্তি বেশি। অল্পে সন্তুষ্ট থাকুন, লোভ করবেন না। কারও জন্য কিছু করে তার প্রতিদান আশা করবেন না।
১৫. ইতিবাচক চিন্তা করুনঃ চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রে আরও বেশি ইতিবাচক হওয়ার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, নেতিবাচক চিন্তা আপনার মনে নেতিবাচক প্রভাবই ফেলে।
পরিশেষে, চাপ আসবেই। ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। কাপুরুষরা চাপকে ভয় পায়। কাপুরুষের মত ভয় না পেয়ে চাপকে চাপে ফেলে সামনে এগিয়ে যান।


No comments:
Post a Comment