আজকাল অনেকেই গতানুগতিক চাকরি করার ধারণা থেকে বের হয়ে নিজ উদ্যোগে কিছু করার চেষ্টা করছেন। যারা নিজ উদ্যোগে নতুন (বা পুরনো কিছু নিজের মত করে) করার চেষ্টা করেন তাদের বলা হয় উদ্যোক্তা। বর্তমানে সারা বিশ্বেই এর ব্যাপক জনপ্রিয়তা। এক্ষেত্রে সাফল্যের হারও নেহায়েত কম নয়। সফল উদ্যোক্তাদের নাম বলে শেষ করা যাবে না। বিল গেটস থেকে শুরু করে মার্ক জাকারবার্গ সবাই কিন্তু সফল উদ্যোক্তা।

হতে চান সফল উদ্যোক্তা ?
অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে কিভাবে হওয়া যায় সফল উদ্যোক্তা, এর জন্য কি কি যোগ্যতা লাগে ইত্যাদি।
উদ্যোক্তা হতে হলে শিক্ষাগত তেমন কোন যোগ্যতার প্রয়োজন নেই। ব্যবসা সম্পর্কিত সাধারন কিছু ধারণা এবং যোগাযোগ রক্ষার গুন থাকলেই যথেষ্ট। নির্দিষ্ট কোন বিষয়ে কাজ করলেই সফল হওয়া যায়, এরকম না। যেকোনো বিষয়েই সফলতা অর্জন করা যায় শুধুমাত্র কিছু নিয়ম এবং অভ্যাসের মাধ্যমে। আসুন জেনে নিই কিভাবে হওয়া যায় সফল উদ্যোক্তা।
১. পছন্দের কাজ বাছাই করুনঃ সফল উদ্যোক্তা হওয়ার প্রথম শর্ত হচ্ছে আপনাকে পছন্দের কাজ বেছে নিতে হবে। আপনি কোন বিষয়ে উদ্যোগী হবেন সেটা একান্তই আপনার বিষয়। তবে মাথায় রাখবেন ব্যবসার বিষয়টি। যদি এমন কিছু বাছাই করেন যার ব্যবসায়িক ভবিষ্যৎ নেই;তাহলে কিন্তু লাভ হবে না।
২. পরিকল্পনা করুনঃ আপনার ব্যবসার খুঁটিনাটি সব পরিকল্পনা করুন। শুরু থেকে শেষ, লাভ থেকে লোকসান- সব কিছুর পরিকল্পনা করুন। প্রয়োজনে অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিন। নিজের যোগ্যতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখুন। যোগ্যতার বাইরে কিছু করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
৩. ছোট করে শুরু করুনঃ যেহেতু আপনি কি করবেন তা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, পরিকল্পনা তৈরি করেছেন; সেহেতু এখন আপনার কাজ হচ্ছে খুব ছোট করে ব্যবসা শুরু করা। নতুন ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রথমেই বড় ধরনের ঝুঁকি না নেওয়াই ভাল।
৪. দক্ষ হওয়ার চেষ্টা করুনঃ উদ্যোক্তা হওয়া কঠিন চ্যালেঞ্জ, সফল হওয়া আরও কঠিন। হতাশ হবেন না। ছোটখাটো ব্যর্থতায় ভেঙ্গে পরার কিছু নেই। এইসব ছোটখাটো ব্যর্থতা বা সফলতা থেকেই শিখতে থাকুন। আপনি যদি অনেকটা সময় আপনার কাজের সাথে লেগে থাকেন তাহলে একদিন দেখা যাবে এই বিষয়ে আপনি প্রচুর অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন এবং এই কাজ সম্পর্কিত সবকিছুই আপনার নখদর্পণে থাকবে।
৫. সামনে এগিয়ে যানঃ প্রতিদিন একটু একটু করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন। হতে পারে সেটা পরিকল্পনা তৈরি বা বাস্তবায়ন অথবা ব্যবসার পুঁজি বা পরিধি বৃদ্ধি- যেকোনো কিছু। লক্ষ্য বড় করতে থাকুন প্রতিনিয়ত এবং লক্ষ্য পূরণে কাজ করতে থাকুন।
৬. সৎ থাকুন, স্থির থাকুনঃ নিজের কাজের প্রতি সৎ থাকুন। সততা ছাড়া সফলতা অর্জন অসম্ভব। আপনার সততাই হতে পারে আপনার ব্যবসার মূলধন।তাড়াহুড়া করবেন না। তাড়াহুড়োর সিদ্ধান্ত আপনার অনুকূলে নাও আসতে পারে। ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিন। মনে রাখবেন, আপনার একটি ভুল সিদ্ধান্ত আপনার স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করে দিতে যথেষ্ট।
৭. সতর্ক থাকুনঃ যতটা সম্ভব সতর্কতা অবলম্বন করুন। ব্যর্থতার কথা মাথায় রাখুন। কোনভাবে ব্যর্থ হলে তার প্রভাব কি হতে পারে সে সম্পর্কে সচেতন থাকুন। যৌথ উদ্যোগের ক্ষেত্রে অংশীদার সম্পর্কে সচেতন হোন। মনে রাখবেন যৌথ উদ্যোগের প্রধান এবং প্রথম শর্ত হচ্ছে বিশ্বাস। বিশ্বাসী অংশীদার বাছাই করুন, যে আপনাকে বিশ্বাস করবে; আপনি যাকে বিশ্বাস করতে পারেন।
৮. ব্যর্থতা মেনে নিনঃ আমাদের মধ্যে অনেকেই আছি ব্যর্থতা সহ্য করতে পারি না। এই মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সাফল্য-ব্যর্থতা একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। বাধা বিপত্তি আসবেই। তাই ব্যর্থতায় বিচলিত না হয়ে নতুন উদ্যমে আবার শুরু করুন। "শেষ দেখেই ছাড়ব" - এই মনোভাব নিয়ে কাজ করুন, সফল আপনি হবেনই।
৯. যোগাযোগ বৃদ্ধি করুনঃ বর্তমান যুগটাই যোগাযোগের যুগ। আপনি আপনার কাস্টমার বা ক্লায়েন্ট এর সাথে যত বেশি এবং ভাল যোগাযোগ রাখবেন; আপনার ব্যবসা ততই সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। এক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ফলদায়ী।
১০. প্রতিযোগী মনোভাব রাখুনঃ আপনার অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী থাকতে পারে। অনেকে হয়ত আপনার চেয়ে অনেকখানি এগিয়ে। ভয় পাবেন না। অন্যদের শক্তি এবং দুর্বলতাগুলো খুঁজে বের করুন। তাদের দুর্বলতাগুলোকে হাতিয়ার করুন। আপনার পরিকল্পনায় রাখুন সেগুলো। আপনার কাজে যেন সেগুলো না থাকে তার প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখুন। মনে রাখবেন এক প্রতিযোগীর দুর্বলতা অন্য প্রতিযোগীর সবলতা।
১১. সুযোগ সন্ধানী হোনঃ সবসময় সুযোগ খুঁজতে থাকুন। আপনার ব্যবসার উন্নতির ক্ষেত্রে উপকারি সব সুযোগ লুফে নিন। তাদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করুন। সুযোগের অসৎ ব্যবহার করবেন না। কারও ক্ষতি করতে চেষ্টা করবেন না। এতে আপনার প্রতি অন্যদের নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে এবং আপনার কাজের ওপর প্রভাব ফেলবে।
১২. পরিশ্রমী হোনঃ সফল উদ্যোক্তা হওয়ার অন্যতম প্রধান চাবিকাঠি হচ্ছে পরিশ্রমী হওয়া। এমন যদি হয়, সবকিছুই করলেন কিন্তু পরিশ্রম করলেন না তাহলে কিছুই হবে না। পরিশ্রমী হতে শিখুন। একটা কথা প্রচলিত আছে- ব্যবহার না করলে ধারালো তলোয়ারেও জং ধরে। আর ব্যবহার করতে করতে জং ধরা তলোয়ারে অনেক কিছু কাটা যায়। আপনার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে বড় ভূমিকা রাখবে আপনার পরিশ্রম। কাজকে ভালবাসুন, সময় দিন। তথ্য, উপাদান যোগার করুন। শিখুন। "অলস শিক্ষিত ব্যক্তির তুলনায় পরিশ্রমী মূর্খ লোক ভাল"।
সবশেষে এটাই বলব, একজন উদ্যোক্তার সফলতা নির্ভর করে তার সততা, আগ্রহ এবং পরিশ্রম ইত্যাদির উপর। উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো অনুশীলন এবং সঠিকভাবে কাজে লাগানোর মাধ্যমে আপনি হয়ে উঠতে পারেন সফল একজন উদ্যোক্তা।

No comments:
Post a Comment